মহান আল্লাহ পাক তার ইবাদতের জন্য মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর আনুগত্য,আদেশ মেনে চলা এবং নিষেধ থেকে দুরে থাকার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ প্রিয় থেকে আরো প্রিয় হয়ে উঠে। মহান রব ইরশাদ করেছেন,”আমি তার প্রাণশিরা অপেক্ষা অধিক নিকটে আছি” (সুরা কাফ:১৬)। আর ইবাদত শারিরীক এবং আর্থিক দু’ধরনের হয়ে থাকে। যাকাত হল আর্থিক ইবাদত, যা সঠিকভাবে পালনের মাধ্যমে বান্দা মহান রবের সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে। যাকাত গরীব দুঃখীদের হক বা পাওনা। যা মহান আল্লাহর পক্ষ হতে গরীবদের প্রতি ধনীদের জন্য অর্পিত দায়িত্ব। মুসলিম জাতির জন্য এক বিশাল নেয়ামত, যা গরিবের অভাব মোচন এবং ধনীদের সম্পদ বাড়িয়ে দিতে এক বিশাল ভুমিকা পালন করে। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, “হে বিশ্বাসীরা! তোমাদের আমি যা দিয়েছি তা থেকে দান করো সেই দিন আসার আগে, যেদিন কোনো রকম বেচাকেনা, বন্ধুত্ব এবং সুপারিশ থাকবে না“ (সুরা বাকারা: ২৫৪)।
যাকাত কখন কিভাবে ফরজ হয় এসব বিষয়ে সকলে অবগত হলেও যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে কিছু অবহেলা বা অসাবধানতার কারনে এই বিশাল নেয়ামত থেকে পিছিয়ে পড়ছে মুসলিম সমাজ। দেখা যায়,যাকাত দেয়া হয় লোক দেখানো, সোস্যাল মিডিয়ায় নিজের প্রচার প্রচারণা, যশ খ্যাতি ইত্যাদি লাভের আশায়, যা খুবই নিন্দনীয় এবং গর্হিত কাজ। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, “হে বিশ্বাসীরা! তোমরা দানের কথা প্রচার করে এবং (দান গ্রহণকারীকে) কষ্ট দিয়ে তোমাদের দানকে বরবাদ করে দিয়ো না, ঠিক ঐ লোকের মতো যে শুধু লোক দেখানোর উদ্দেশ্যেই দান করে।“ (সুরা বাকারা: ২৬৪)
যাকাত মুসলিম জাতির জন্য মহান রবের নির্দেশ। যাকাত দিতে হবে এমন পন্য যা(কাপড় হওয়া শর্ত নয়) আপনি নিজের জন্য পছন্দ করবেন। যাকাত দিতে কার্পন্য একজন মুসলিম মুমিনের জন্য কোনভাবে সমীচিন নয়। যাকাত আদায়কারীর এমন মনে করা উচিত নয় যে আমার অর্জিত সম্পদ থেকে তাকে দান করছি। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “তোমরা যা কিছু দান করো তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করো, আর যা কিছু তোমরা দান করো, তার পুরস্কার পুরোপুরি প্রদান করা হবে।’ -(সুরা বাকারা : ২৭২)
যাকাত হচ্ছে একজন গ্রহীতার অধিকার বা পাওনা। যা কখনোই দাতার অংশ হতে পারে না। সুতরাং যাকাত দিতে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, আপনি যা দিচ্ছেন তা যেন গ্রহীতার কাজে আসে অথবা এমন কিছু দেয়া উচিত যা তার খুব প্রয়োজন। যাকাত মানেই অল্প দামের শাড়ি বা লুংগি নয়। দুঃখের সাথে বলতে হয় মার্কেটে আলাদা করে নিম্নমানের কিছু কাপড় দেখা যায় যেগুলো যাকাতের জন্য নির্ধারিত। যেই কাপড়গুলো কেউই কিনে না, মানে খারাপ কিন্তু দামে সস্তা। এগুলো একসাথে ১০/২০/৩০ জনের জন্য যাকাত দেয়ার উদ্দেশ্যে কেনা হয়, যা কয়েক ধোয়াতে আর ব্যবহারের উপযোগী থাকে না। এক্ষেত্রে গ্রহীতার কোন লাভ না হলেও দাতা তার পরিবার, সমাজ,সোস্যাল মিডিয়ার গর্বের সাথে বলতে পারে ৩০ জনকে যাকাত দিয়েছি। এমন দানের শিক্ষা ইসলাম আমাদের দেয় নি। নবী করীম (সা.) বলেছেন, “কেয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তিন শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন না। তাদের মধ্যে একজন হলো, (দান করে) অনুগ্রহ প্রকাশকারী ব্যক্তি।“-(মুসলিম: ১০৬)
যাকাত দেয়া মানে দাতার দানে গ্রহীতা আনন্দিত হওয়া। যাকাত হতে পারে ১০টি পরিবারকে নির্দিষ্ট কিছু টাকা দেয়া, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস বাজার করে দেয়া,এক বেলা খাবারের ব্যবস্থা করে দেয়া ইত্যাদি। যাকাত একজন মুসলিম ভাই থেকে অন্য ভাইয়ের প্রাপ্য।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় নিজের আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী, বন্ধু বান্ধব যারা অভাবী, তাদের বাদ দিয়ে এমন জায়গায় দেয়া হয় যেখানে দিলে নিজের প্রচারণা বাড়বে, মানুষ জানতে পারবে, লোকজন বাহবা দিবে,নামের আগে কয়েকটি উপাধির সংযোজন হবে। এমন লোকের যাকাত আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে কখনোই কবুল হবে না। যাকাত দেয়ার ক্ষেত্রে নিজের কাছের মানুষ, আশেপাশের মানুষ অগ্রাধিকার পাবে। সুন্দর হোক মানুষগুলো, সুন্দর থাকুক পৃথিবী।
লেখক: হাসিসা সুরমা
প্রশাসনিক কর্মকর্তা, আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ।
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় , চট্রগ্রাম।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।